1. admin@dailygrambangla.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে ব্যর্থতার দায় নিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগ বিরল

  • আপডেট : রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩
  • ৪৭৪ বার পঠিত

হৃদয় হোসাইন-প্রতিবেদক:

কোনো ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সেই মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।এমন ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। পৃথিবীর অনেক দেশের মন্ত্রী ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। গ্রিসে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দেশটিতে ৩৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন অবকাঠামো ও পরিবহণ মন্ত্রী কোস্টাস কারামানলিস। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে কোস্টাস কারামানলিস বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা যখন ঘটেছে,তখন কিছু না ঘটার ভান করে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি এ ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি এবং পরিবহণমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিচ্ছি।তিনি আরও বলেন,ট্রেন দুর্ঘটনায় যে মানুষেরা মারা গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পদত্যাগ করা আমার কর্তব্য।

বাংলাদেশে ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল ৮:৪৫ এ সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। ভবনের কয়েকটি তলা নিচে ডেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এ দূর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রী ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছে বলে জানা যায়নি।

কসবার মন্দবাগ ট্র্যাজেডি সম্প্রতি সংঘটিত বড় রেল দুর্ঘটনা।বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনাটি হয় ১৯৮৯ সালে।টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন আউটারে এ দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত হন। আহত হন ৪০০ যাত্রী।একই সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত হন ১৩ জন।আহত হন ১০০ জন।১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দিনাজপুর হিলি রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ৫০ যাত্রী। আহত হন দুই শতাধিক। ১৯৮৩ সালের ২২ মার্চ ঈশ্বরদীর কাছে একটি রেল সেতু ভেঙে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬০ যাত্রী। আহত হন দেড় শতাধিক। ১৯৮৬ সালের ১৫ মার্চ সর্বহারার নাশকতায় ভেড়ামারার কাছে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে গিয়ে ২৫ যাত্রী নিহত হন। আহত হন ৪৫ যাত্রী।২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৪ জন প্রাণ হারান। ২০১৯ সালের ২৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার বরমচাল লেভেলক্রসিং এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত হন। আহত হন ৪০ জন।এসকল ঘটনায় একজন রেল মন্ত্রী ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করছে বলে জানা যায়নি। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু—দুটোই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০৩ জনই শিক্ষার্থী। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছর যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের ১৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যুকে হত্যা বলে মনে করছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।সড়ক পথে এত মৃত্যু ব্যর্থতার দায় নিয়ে আজ পযন্ত কোনো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী পদত্যাগ করছে বলে খবর জানা যায়নি।

২০১২-এর ঢাকা অগ্নিকাণ্ড বা তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সংঘটিত একটি মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড যাতে মোট ১১৭ জন পোষাক শ্রমিক নিহত হয় ও ২০০ জনের অধিক আহত হয়। ভয়ানক এই দুর্ঘটনায় ঐ পোশাক কারখানার নয়তলা ভবনের ছয়তলা ভস্মীভূত হয়ে যায়। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোষাকশ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের। ২৭ নভেম্বর ২০১২,মঙ্গলবার বাংলাদেশে শোক দিবস পালিত হয়।এ ঘটনায় হয়তো তদন্ত কমিটি গঠন হয়েই শেষ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বিভিন্ন ধরণের নৌযান। অন্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় নিরাপদ এবং ব্যয়- সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের একটি বড় অংশ এখনো নৌপথেই হয়ে থাকে। যান চালনায় নিয়ম না মানা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে লঞ্চ বা ফেরি পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং যান্ত্রিক ত্রুটি এমন নানা কারণে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। ২০২০ সালের ২৯ জুন ঢাকার পোস্তগোলা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গায় মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ সেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।২০০২ সালের ৩ মে চাঁদপুরের ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডুবে যায় সালাহউদ্দিন-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ। এতে ভোলা এবং পটুয়াখালীর প্রায় ৪শ যাত্রী মারা যান।ওই দুর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের করা একটি তদন্ত কমিটি নকশামতো লঞ্চ নির্মাণ না করায় মালিককে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য মাস্টারকে অভিযুক্ত করে। এতে ওই লঞ্চের মালিককে জরিমানা এবং মাস্টারকে চাকরীচ্যুত করা হলেও অন্যদের শাস্তি হয়নি।এর আগে আরো অনেক এমন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে।যার ব্যর্থতার দেয়নি কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়নি।

বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কোনো শিক্ষামন্ত্রী বা দায়িত্বগত কর্মকর্তা কর্মচারী কে পদত্যাগ করতে হয়নি।বাংলাদেশের উন্নয়নে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করেন সরকার প্রধান তার পক্ষে একা বাংলাদেশ কে স্বপ্নের সোনার বাংলায় রুপ দেওয়া সম্ভব না।এর জন্য দরকার সকলের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২২ © দেশ প্রকাশ ©
Theme Customized By Shakil IT Park